ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ফিজির সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দ্বার উম্মোচনের সম্ভাবনা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১২, ২৫ জুলাই ২০২২ | আপডেট: ২০:১৩, ২৫ জুলাই ২০২২

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের তিন দিনব্যাপী ফিজির সফরের দ্বিতীয় দিনে কৃষি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক চুড়ান্ত করা হয়। ফিজির কৃষিমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে তিনি আলাদা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। 

কৃষি মন্ত্রী ড. মাহেন্দ্র রেড্ডির সাথে বৈঠককালে বাংলাদেশ ও ফিজির মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আরো নিবিড় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। 

হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ বিগত এক দশকে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। লবনাক্ততা সহিষ্ণু ধান আবিষ্কারে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিকট হতে জলবায়ু ভঙ্গুর দেশ হিসেবে ফিজি অভিজ্ঞতা নিতে পারে বলে হাইকমিশনার উল্লেখ করেন। ফিজিতে অনেক আবাদযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে এবং ফিজির আবহাওয়া কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ ও ফিজির যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয় উত্থাপন করেন। 

ফিজির কৃষি মন্ত্রী ড. মাহেন্দ্র রেড্ডি বলেন, ফিজি কৃষিতে সাফল্য নিয়ে আসার জন্য বাণিজ্যিক কৃষির ওপর জোর দিচ্ছে। তিনি কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য তার দেশের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। 

ফিজিকে প্যাসিফিক অঞ্চলের হাব হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত এবং নতুন নতুন গবেষেণা অর্ন্তভূক্ত করা প্রয়োজন। তিনি কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যোর ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশের নিকট হতে কৃষি গবেষেণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা জন্য একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চুড়ান্ত করা হয় যা পরবর্তীতে দুদেশের মধ্যে সরকারিভাবে স্বাক্ষরিত হবে। 

একই দিনে ফিজির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফাইয়াজ খোয়া ও বাংলাদেশের হাইকমিশনার দু’দেশের  মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর আলোচনা করেন। 

ফাইয়াজ খোয়া বলেন, বাংলাদেশ ও ফিজি দীর্ঘ দিনের বন্ধুপ্রতিম দেশ। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগ সহজিকরণের জন্য ফিজি সরকারও বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা ফিজি সরকারের প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করে বিনিয়োগ করতে পারে। 

হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি করছে। তিনি তৈরি পোষাকের পাশাপাশি, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, ঔষধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আইটি ও আইটি এনাবেল্ড সার্ভিস রপ্তানিতে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঔষধ ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ঔষধ আমদানি করে ফিজি সুলভে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে পারে। 

হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দক্ষ পেশাজীবী এবং বিনিয়োগকারীরা ফিজির উন্নয়নে অবদান রাখছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

মন্ত্রী বলেন, ফিজির উন্নয়নের জন্য দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবী প্রয়োজন যেখানে বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ করতে পারে। পেশাজীবীদের ফিজিতে কাজ করার জন্য ফিজি সরকারের গৃহীত উদ্যোগ তিনি তুলে ধরেন। 

হাইকমিশনার বলেন- ফিজি এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করে পুরো প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে পারে। বৈঠকে উভয় পক্ষ ফিজি থেকে বাংলাদেশে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করার ব্যাপারে একমত হয়। 

একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ফিজির রাজধানী সুভা’র হোটেল হলিডে ইন এ বাংলাদেশ ফিজি বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপনের জন্য একটি রিসেপশনের আয়োজন করা হয়। ফিজিতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ফিজি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, ব্যবসা ও মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জলবায়ু ভঙ্গুরতা, শান্তি রক্ষা, পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ফিজি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজমান সমঝোতার উল্লেখ করে এ বিষয়গুলোতে আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির সম্মূখীন দেশগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

গত ২৪ জুলাই ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ ফিজি এসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিজি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইনিয়া সেরুইরাতু, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং ফিজির কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ফিজির বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসীকর্মী, প্রবাসী পেশাজীবী এবং ফিজির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। 
কেআই// 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি